জার্কাতা থেকে: রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ভূমিকা রাখতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোকে অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (৭ মার্চ) দুপুরের পর জাকার্তা সম্মেলন কেন্দ্রের কাকাতুয়া রুমে ইন্দোনেশিয়া প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে এ অনুরোধ করেন তিনি।
ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জোট ইন্ডিয়ান ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনভুক্ত (আইওআরএ) দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের নিয়ে আয়োজিত লিডার সামিট উপলক্ষে ইন্দোনেশিয়া সফরে রয়েছেন শেখ হাসিনা।
উইদোদোর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মেজর জেনারেল আজমল কবির।
শহীদুল হক বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টকে বলেছেন, এটা একটা বড় ধরনের সমস্যা। এটা সমাধান করা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, মায়ানমারের রোহিঙ্গারা, যারা বাংলাদেশে আছেন, তাদের স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য ইন্দোনেশিয়া যেন একটা রোল প্লে করে, প্রধানমন্ত্রী সে অনুরোধ করেছেন উইদোদোকে।
সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে যান। তিনি মায়ানমার সফরেও যান সেসময়। এ বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে ইন্দোনেশিয়া ২৫০টি ক্যারেজ (বগি) সাপ্লাই করেছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেন বৈঠকে।
বাংলাদেশের রেলওয়ের উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ করে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেন, রেলওয়েতে ইন্দোনেশিয়া বেশ অগ্রগতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের রেলওয়ের উন্নয়নে অবদান রাখতে চায় জাকার্তা।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ ৭০টি দেশে বাংলাদেশ ওষুধ রপ্তানি করে।
বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প নিয়ে ইন্দোনেশিয়া আগ্রহ প্রকাশ করেছে জানিয়ে শহীদুল হক বলেন, দু’দেশের ওষুধ শিল্পের মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
ইন্দোনেশিয়া এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) উৎপাদন ও রপ্তানি করে উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব জানান, এ ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।এলএনজি বিষয়ে ইন্দোনেশিয়া একটা সমঝোতা স্মারকের প্রস্তাব দিয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সংশ্লিষ্টরা সেটা দেখছেন। এটা যদি বাংলাদেশের জন্য ভাল হয় তাহলে হবে। তবে এটা এখনও আলোচনার পর্যায়ে আছে। যদিও ইন্দোনেশিয়া পরিপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছে।
শহীদুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বৈঠকে। উইদোদো আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন এবং বলেছেন দুই মাসের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের একটা টিম ঢাকা পাঠাবেন তার সফরের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য।
সচিব বলেন, এ বছরের শেষে প্রেসিডেন্টের সফর আশা করছি, তবে তা নির্ভর করছে যে প্রতিনিধিদল যাবে তার ওপর।
শহীদুল হক বলেন, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্র সচিব।